বিদ্যা ও শিক্ষা কি এক নাকি আলাদা ??
বিদ্যা ও শিক্ষা
বিদ্যা ও শিক্ষা আপাতদৃষ্টিতে এক মনে হলেও বিষয় দুটি আলাদা। বিদ্যা শব্দটির মধ্যে বিদ্ ধাতু আছে যার অর্থ জানা। শিক্ষার মধ্যে শেখার একটা বিষয় আছে। জানা হলো জ্ঞান অর্জন করা। শেখা হল হাতে-কলমে আয়ত্ত করা। বিদ্যা হল একটা জ্ঞান যা আমরা লাভ করি এবং বিদ্বান হই । যেখানে গিয়ে আমরা এই বিদ্যা বা জ্ঞানটিকে লাভ করি সেটিকে বলি বিদ্যালয়। শিক্ষা হল অভ্যাস ও ব্যবহার। "অভ্যাস ব্যবহার যার যত, শিক্ষাও হয় তার তত।"বিদ্যার জ্ঞান যখন আমাদের অভ্যাস ও ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করে উন্নত করে তখনই হয়ে ওঠে আমাদের শিক্ষা। বিদ্যাকে ইংরেজিতে বলে নলেজ। শিক্ষা হলো এডুকেশন। এডুকেশন ইজ দ্য ম্যানিফেষ্টেশন অফ পারফেকশন। অর্থাৎ শিক্ষা হলো, তাই পূর্ণতার প্রকাশ হলো। তাই যারা শেখান, তাদেরকে শিক্ষক বলা হয়। এই শিক্ষক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারে বাড়ির মা বাবা পরিবেশের যে ব্যক্তিত্বর কাছ থেকে হাতে কলমে অভ্যাস ও ব্যবহারের পাঠ নেওয়া হয়, তিনি হবেন শিক্ষক। বিদ্যার তুলনায় শিক্ষকের স্থান ছাত্রের জীবনে অনেক বেশি। শিক্ষক শিক্ষিত হয়ে বিদ্যাকে দান করে ছাত্রদের। বিদ্যা আমাদের জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। এখন একই বিদ্যা বোধ ও চেতনা অনুযায়ী নতুন নতুন শিক্ষার সৃষ্টি করে। বিদ্যার বিষয়গুলি নানারকম সাংসারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় চিত্র বিষয়ক। এই বিদ্যা বিষয়ক জ্ঞান থেকে যেমন আমরা পাই ভগবত উপাসনার কথা, তেমনি আবার পাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে যা যা বিষয় আমাদের বাঁচা ও বাড়াকে সমৃদ্ধ করে তাই। বিদ্যাকে যখন গ্রহণ করা হয় এবং জীবনে হাতে-কলমে প্রয়োগ করা হয় অর্থাৎ বিদ্যাকে যখন প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় তখনই সেটা শিক্ষা হয়। বিদ্যা মনে চিরস্থায়ী দাগ কাটে না কিন্তু শিক্ষা মনে চিরস্থায়ী দাগ কেটে ব্যক্তিত্বকে নব অস্তিত্বে পরিণত করে। বিদ্যা বিনয় দান করে। বিদ্যা জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। শিক্ষা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কে পাল্টে দেয়। বিদ্যা মানে যদি জ্ঞান হয় তবে এই জ্ঞানকে কেউ সৃষ্টি করতে পারে না । কারণ বিদ্যা সবসময়ই আছে । বিদ্যা বা জ্ঞান অর্জন করতে হয় । বিদ্যাটা বা জানাটা জানা হলে আমরা বলি জ্ঞান হলো। পৃথিবীর যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি চিরকালই পৃথিবীতে ছিল । এই যুগের বৈজ্ঞানিক নিউটনের নিকট তার প্রতিভাত হল । সেই অর্থে নিউটন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্রষ্টা, স্রষ্টা নন। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিদ্যা যখন প্রয়োগ করা হয় কোন বৈজ্ঞানিক বিষয়ে সেটা হয়ে ওঠে শিক্ষা। এক কথায় বিদ্যা হল শুরু, শিক্ষায় হয় তার পরিসমাপ্তি। বিদ্যার রূপ পরিবর্তন হয় বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের বোধ ও চেতনা অনুযায়ী। বিদ্যার দেবী সরস্বতী। শিক্ষার দেবদেবী হলেন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা।আর এই শিক্ষক কিন্তু প্রকৃতি ও হতে পারে। কবি সুনির্মল বসু তার " সবার আমি ছাত্র " কবিতা তে সেটি বুঝিয়েছেন। বিদ্যা, শিক্ষক-শিক্ষিকার মাধ্যম দিয়ে আমাদের জীবনের প্রতিভাত হয়। আমরা বিদ্যা অর্জন করি। "বিদ্যা"-কে যখন আবার অপরকে দান করে কারো জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারি তখনই আমাদের যথার্থ শিক্ষা হয়। শিক্ষক হয়ে উঠি আমরা। পরিশেষে বিদ্যা ও শিক্ষা একইসঙ্গে আমাদের জীবনে এসে জীবনকে নতুন ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। উদাহণস্বরূপ ----- মহাভারতে কর্ণ কিন্তু মহাধনুর্ধর ছিলেন। কিন্তু কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে যখন তার রথের চাকা মাটিতে গেঁথে গিয়েছিল তখন যে তার সাময়িক বিদ্যা ভুলে গিয়েছিল। অপরদিকে অর্জুন কিন্তু নিজের শিক্ষা ভোলেননি। কারণ কর্ণের অহংকার তার বিদ্যা কে শিক্ষা তে রূপান্তরিত হতে দেয় নি। তাই বলা যায় সব শিক্ষাই বিদ্যা, কিন্তু সব বিদ্যা শিক্ষা নয়। ধন্যবাদ।।